বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কে কোথায়?
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ছয় খুনির মধ্যে দুজনের অবস্থান সম্পর্কে সরকার নিশ্চিত। তবে খবর নেই বাকি চারজনের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলাতক খুনি নূর চৌধুরী কানাডায় ও রাশেদ চৌধুরী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। কোথায় কী অবস্থায় তারা আছেন, সেসব তথ্য সরকারের কাছে থাকলেও তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারছে না।
খুনি কর্নেল রশিদসহ চারজনের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আসে সরকারের কাছে। তথ্যানুযায়ী খন্দকার আবদুর রশিদ পাকিস্তান কিংবা লিবিয়ায়, শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান, আবদুল মাজেদ সেনেগাল ও মোসলেমউদ্দিন জার্মানিতে অবস্থান করছেন। তবে এসব তথ্যের সত্যতা শতভাগ নিশ্চিত হতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডের রায় আংশিক কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে। সে রাতে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে সাড়ে ছয় বছর। অথচ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা ছয় খুনিকে এখনো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। কবে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বা আদৌ সম্ভব হবে কিনা, এর জবাব নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। কার্যকর উদ্যোগের অভাবে ছয় খুনি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন বলে মনে করছে অনেকে। উল্লেখ্য, রায় কার্যকরের আগেই ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান অন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি আজিজ পাশা।
পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, পলাতক খুনিদের খোঁজে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা আছে। এর বাইরেও সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইন্টারপোলের রেড নোটিস বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। রেড নোটিসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় উল্লেখ থাকে। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবস্থান মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। এ সুযোগটিও কাজে লাগাতে পারেন বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিরা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের অবস্থান চিহ্নিত করতে তাদের আত্মীয়স্বজনের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করছে সরকার। ভবিষ্যতেও ট্র্যাকিং অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুনিরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিবিড় অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থার ডিআইজির নেতৃত্বে একটি দল কাজও করছে।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য পলাতক নূর চৌধুরী কানাডায় আবেদন জানান। তবে তা খারিজ হয়ে যায়। এর পরও তাকে ফেরত আনার ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। কানাডার রাজধানী টরন্টোর ১৩ কিলোমিটার উপকণ্ঠ ইটোবিকোকে তিনি এখন অবস্থান করছেন। সূত্র জানায়, নূর চৌধুরী ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ১৯৭৬ সালে তিনি ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসে দ্বিতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ পান।
পরে আলজেরিয়া ও ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং হংকংয়ের কনস্যুলেটে বদলি হন। ১৯৯৪ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি হংকংয়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ছিলেন। ’৯৬ সালের জুনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। সূত্র জানায়, খুনি রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী সেক্রামেন্টো থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরের শহর কনকর্ডে অবস্থান করছেন। তিনি ইতিমধ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। রাশেদ চৌধুরী ১৯৭৬ সালে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটে দ্বিতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। পরে তিনি কেনিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান ও ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করেন। ’৯৬ সালের জুলাইয়ে তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। তাকে ওই বছরের জুলাইয়ে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি ব্রাজিলের সাও পাওলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো চলে যান।
Leave a Comment